"চাকরির জন্য জীবন নয়, বরং জীবনের জন্য চাকরি

 

"চাকরির জন্য জীবন নয়, বরং জীবনের জন্য চাকরি। চাকরি শেষেও জীবন আছে"— কর্মজীবীদের জন্য কিছু সময়োপযোগী পরামর্শঃ
১. যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজের একটা ঘর তৈরি করুন—গ্রামে হোক বা শহরে। ৫০ বছর বয়সে ঘর বানানো কোনো বড় কৃতিত্ব নয়। সরকারি বাসায় থাকার অভ্যাস বিপজ্জনক স্বাচ্ছন্দ্য এনে দেয়। নিজের ঘরে পরিবারকে সুখের সময় কাটাতে দিন।
২. সব সময় অফিসে পড়ে থাকবেন না। আপনি অফিসের একমাত্র স্তম্ভ নন। আপনি যদি হঠাৎ না-ও থাকেন, অফিস পরদিন থেকেই স্বাভাবিকভাবে চলবে। পরিবারই হোক আপনার প্রথম অগ্রাধিকার।
৩. পদোন্নতির পেছনে না ছুটে দক্ষতা অর্জনে মন দিন। আপনি যেটা করেন, তাতে নিখুঁত হোন। পদোন্নতি এলে ভালো, না এলে নিজেকে আরও উন্নত করার চেষ্টা চালিয়ে যান। আপনার গুণই একদিন আপনাকে জায়গা করে দেবে।
৪. অফিসের পরচর্চা বা নিন্দা থেকে দূরে থাকুন। কারো নামে বদনাম করে নিজের সম্মান নষ্ট করবেন না। নেতিবাচক আড্ডায় যোগ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৫. বসদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যাবেন না— তাতে শুধু ঝামেলাই বাড়বে। সহকর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলে মানসিক শান্তি হারাবেন।
৬. একটি সাইড বিজনেস শুরু করুন। শুধু বেতনে ভবিষ্যতের প্রয়োজন মেটানো কঠিন।
৭. নিয়মিত কিছু টাকা জমা করুন—বেতনের সঙ্গে সঙ্গে যেন তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হয়।
৮. লোন নিন ব্যবসায় বিনিয়োগ বা জীবনযাত্রার উন্নয়নের জন্য, বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য নয়। বিলাসিতা করুন লাভ থেকে।
৯. ব্যক্তিগত জীবন, সংসার ও দাম্পত্য সম্পর্ককে ব্যক্তিগত রাখুন—কর্মস্থল থেকে আলাদা। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত শান্তিই আসল শক্তি।
১০. নিজের প্রতি বিশ্বস্ত থাকুন। কাজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। বসের আশেপাশে ঘুরঘুর করলে সহকর্মীদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবেন, আর একদিন সেই বসও হয়তো আপনাকে ছেড়ে চলে যাবেন।
১১. অবসরের পরিকল্পনা চাকরি পাওয়ার দিন থেকেই করা উচিত। যদি তা না হয়, আজই শুরু করুন। ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যেই অবসর নিন।
১২. কর্মস্থলের কল্যাণমূলক সংগঠনে যুক্ত থাকুন। কঠিন সময়গুলোতে তা আপনাকে সাহায্য করবে।
১৩. ছুটির দিনগুলো শুধু বিশ্রামে নয়—ভবিষ্যতের জন্য কিছু গঠনমূলক কাজে ব্যয় করুন। যেভাবে আপনি ছুটিতে সময় কাটান, অবসরের পর জীবনের রূপ তেমনই হবে।
১৪. চাকরিতে থাকাকালীনই কোনো প্রকল্প শুরু করুন। একটা না চললে আরেকটা শুরু করুন যতক্ষণ না তা সফল হয়। সফল প্রকল্প হাতে নিয়েই অবসর নিন।
১৫. পেনশন টাকা দিয়ে প্রকল্প শুরু নয়, বরং তা নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন ও জীবনযাত্রা বজায় রাখার জন্য। এটা দিয়ে স্কুল ফি বা নতুন বিয়ে নয়—নিজের দেখভাল করুন।
১৬. অবসরের পর যেন জীবন দুর্বিষহ না হয়, বরং এমন হোন যেন অন্যরাও আপনার পথ অনুসরণ করতে চায়। অবসরকে ভয়ের নয়, অনুপ্রেরণার গল্প বানান।
১৭. "শেষ হয়ে গেছি" বলে নয়, জীবনের আনন্দ উপভোগের জন্য অবসর নিন। সময় থাকতেই নিজেকে উপহার দিন—এক কাপ কফি, সূর্যোদয় দেখা, ব্যবসার আয়, প্রিয়জনের সান্নিধ্য। দেরিতে অবসর নেওয়া মানে জীবনের অধিকাংশ সময় অফিসে কাটানো, যা পরবর্তীতে পরিবারের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াকে কঠিন করে তোলে।
১৮. নিজের বাড়িতে অবসর নিন, সরকারি বাসায় নয়। এতে করে সমাজে ফিরে যাওয়া সহজ হবে।
১৯. চাকরির সুবিধাগুলো যেন অবসরের বাস্তবতা ভুলিয়ে না দেয়। চাকরির উপকারিতা ক্ষণস্থায়ী। অবসরের পর যদি আপনার নিজস্ব কিছু না থাকে, “স্যার” ডাকও আর থাকবে না।
২০. অবসরকে ভয় পাবেন না। স্বেচ্ছায় নিন বা বাধ্য হয়ে— অবসর একদিন আসবেই। তাই আজ থেকেই প্রস্তুত হোন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন

যোগাযোগ ফর্ম